– আল রাহাত

কক্সবাজার নামের পর্যটন নগরীর এই বেহাল দশার জন্য দায়ী কি শুধুই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড? নাকি আদতে গোড়াতেই গন্ডগোল! আমরা কি আসলেই একটা শহর? নাকি মফস্বল? আমার মা আবার আদর করে বলেন কক্সবাজার নাকি আসলে একটা উন্নত গ্রাম!

আমার প্রশ্ন, আসলেই কক্সবাজার কি? কিছু বছর আগেও কক্সবাজারের রাস্তায় দাপটের সঙ্গে চলাচল করত শুধু রিক্সা আর রিক্সা। এখন সে জায়গা দখলে নিয়েছে টমটম। কিছুদিন আগেও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলী, লাবণী পয়েন্টের নির্জনতায় সন্ধ্যার পর নিজেকে আত্মসমর্পণ করা যেত হর হামেশা। এখন সেখানে রেস্তোরাঁ, হকার ও নানারূপ সভ্যতার জঞ্জাল! কিন্তু আজ কক্সবাজারে নির্জনতা, শান্তি বা হাফ ছেড়ে বাচতে আসা মানুষগুলোর সেই নির্জনতা, শান্তি বা আয়েশের কক্সবাজার কি আর আছে? নাকি শহর ও উন্নত হতে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে অনেক আগেই স্বকীয়তা হারিয়ে মৃতপ্রায় মুমূর্ষের মত ধুকছে? সে আলোচনা আরেকদিন হবে ক্ষন।

আমি বরাবরই উন্নয়ন, উন্নতি ও সভ্যতার ক্রমবিকাশের পক্ষের লোক। কিন্তু উন্নয়নের দোহাই দিয়ে যাতে মানুষের নূন্যতম নাগরিক অধিকারের তেরটা বাজানো না হয় সেদিকটা দেখার দায়ও বোধহয় গুছিয়েছে এই তল্লাটের হর্তাকর্তা ও বাবুরা। তা না হলে, একটা মূল রাস্তায় দিনের পর দিন কিভাবে হাটু পরিমান কাঁদা থাকে, যদিও বৃষ্টি হয়না প্রায় দুই মাস ধরে? কাজ চলছে বলে রাস্তায় খানাখন্দ থাকবে সেটা কি অলিখিত কোন নিয়ম? নাকি নালার পানি সেঁচে রাস্তায় ফেলতে হবে এটাও নতুন কোন নিয়ম উন্নয়নের? উন্নয়ন কি বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে আর কোন তল্লাটে, আর কোন রাস্তায় হচ্ছেনা?

এখন মড়ার উপর খাড়ার ঘা হয়ে শুরু হয়েছে নয়া বিদ্যুৎ বিভ্রাট। মাইক নিয়ে সন্ধ্যা বেলায় জোরেশোরে জানান দিয়ে গেলেন আগামীকাল অমুক-তমুক জায়গার সকাল-সন্ধ্যা বিদ্যুৎ থাকবে না। তাও একদিন নয়, এভাবে দিনের পর দিন চলছে-চলবে। এ যেন নয়া হরতাল এর আধুনিক ভার্সন। যেন ঘোষনা দিলেই কর্তৃপক্ষের দায়-দায়িত্ব শেষ। তা কর্তৃপক্ষ মহোদয় এই ঘোষনাটাও দিয়ে দেন, ঠিক আর কতদিন এভাবে চলার পর আপনাদের উন্নয়নের এই মহাযজ্ঞ ( নাকি মহাযন্ত্রনা) থামবে। নাকি এটাও হরতাল এর মত চলছে-চলবে টাইপের কোন নয়া যন্ত্রণা। আচ্ছা সারাদিন উন্নয়নের নামে এই মহা ভোগান্তির পর, রাতে ঠিক কোন কারণে আবার লোডশেডিং হয়? সেটাও কর্তাবাবুরা মাইকে বিদ্যুৎ বন্ধের ঘোষনার সময় জনগনকে একটু জানিয়ে দিবেন প্লিজ?

আমরা সবাই জানি রাত পেরোলেই ভোর হয়, খারাপ সময়ের পরেই ভাল সময় আসে, একটা শিশু জন্মাতে প্রসববেদনার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু এটাও ঠিক অতিরিক্ত সময় ধরে প্রসববেদনা হতে থাকলে যদি তড়িৎ ব্যবস্থা নিয়ে বিকল্প ও উন্নততর ব্যবস্থায় শিশুর ভূমিষ্ঠ হওয়ার ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে অতিরিক্ত প্রসববেদনায় মা ও শিশু দুজনেই মারা যেতে পারে। তাই কক্সবাজারের হর্তাকর্তা ও বাবুদের অনুরোধ করব উন্নয়নের প্রসববেদনার দোহাই দিয়ে জনগণকে আর কষ্ট না দিয়ে বরং কত কম বেদনায় উন্নয়নের এই মহাযজ্ঞ নামক মহাযন্ত্রনা কমানো যায় সেদিকে সুদৃষ্টি দিলে মনে হয় কক্সবাজারবাসী হাফ ছেড়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়ার সুযোগ পাবে।

লেখক: প্রভাষক , কক্সবাজার সিটি কলেজ ।